পানির-ভারসাম্যতত্ত্ব, আসলনকল নির্ধারণী যন্ত্রের আবিষ্কারক মুসলিম মনীষী
২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
আল কাজিনী’র সম্পূর্ণ নাম আবু আল-ফাত আবদুল-রহমান মনসুর আল কাজিনী। তবে তিনি আল - কাজিনী নামে বেশী পরিচিত। তিনি ছিলেন সেলজুক পারস্যের গ্রীক বংশদ্ভূত ইরানী জ্যোতির্বিদ। সুলতান সানজারির যার পুরা নাম জিজ আল-সানজারি (১১১৫-১১৩০) পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁর জ্যোতির্বিজ্ঞানের সারণীগুলি রচনা করেন। যা মধ্যযুগের গাণিতিক জ্যোতির্বিদ্যার অন্যতম প্রধান রচনা হিসাবে বিবেচিত হয়। তিনি স্থির নক্ষত্রের অবস্থান এবং তার জন্মস্থান মার্ভের অক্ষাংশের জন্য তির্যক অভিক্রমণ ও সময় সমীকরণ প্রদান করেন। তিনি বিভিন্ন ক্যালেন্ডার পদ্ধতি এবং ক্যালেন্ডারের বিভিন্ন হেরফের নিয়েও ব্যাপকভাবে গবেষণা করেন এবং লিখেন। তিনি স্কেল এবং পানির-ভারসাম্য সম্পর্কিত একটি ‘বিশ্বকোষ’- এর লেখক ছিলেন।
আল-কাজিনী ছিলেন তৎকালীন খোরাসানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর মারভের মুক্তি পাওয়া কৃতদাস। তিনি তার নামটি পেয়েছিন তাঁর মুনিবের কাছ থেকে। যার নাম ছিলো আবু’ল হুসেন আলী ইবনে মুহাম্মদ আল-খাজিন আল-মারওয়াজি। আল-কাজিনী’র মুনিব মারভের খাজাঞ্চি ছিলেন। খাজিন শব্দটি ইসলামের প্রাথমিক আমল থেকেই খাজাঞ্চির উপাধি ছিল। আল-কাজিনী যাতে প্রথম শ্রেণির পড়াশোনা করতে পারে সেজন্য তাঁর মুনিব ব্যবস্থা করেছিলেন। কেউ কেউ মনে করেন যে আল-কাজিনী ওমর খৈয়ামের শিষ্য ছিলেন। যদিও এটি সঠিক কিনা জানা যায় না। তবে তিনি ওমর খৈয়াম সম্পর্কে লিখেছেন, বিশেষ করে তিনি তাঁর উদ্ভাবিত পানি-ভারসাম্যের বিবরণ দিয়েছেন। পরে আল-আসফজারি এটি আরও সমৃদ্ধ করেছেন। কিছু কিছু উৎস অনুসারে তিনি ১০৭৯ খ্রীস্টাব্দে ফার্সি ক্যালেন্ডারের সংস্কারে তাঁর সাথে সহযোগিতা করেছিলেন।
আল কাজিনী একজন নম্র মানুষ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি তার কাজের জন্য হাজারো দিনারকে অস্বীকার করে বলেছিলেন যে, তাঁর বেঁচে থাকার খুব বেশি দরকার নেই। কেননা তাঁর পরিবারে কেবল তাঁর বিড়াল এবং তিনি নিজে ছিলেন। আল কাজিনী ছিলেন ইসলামী যুগের কেবলমাত্র বিশজন জ্যোতির্বিদদের মধ্যে একজন যারা মূল পর্যবেক্ষক ছিলেন। তাঁর কাজগুলি চতুর্দশ শতাব্দীতে বাইজান্টিয়ামে পৌঁছেছিল। বিশেষত তারা জর্জ ক্রিসোকোকেস এবং পরে থিওডোর মেলিটেনিয়টস এর মাধ্যমে অধ্যয়ন করেছিল। জানা যায়, আল কাজিনী সানজার ইবনে মালিকশাহ এবং সেলযুক সাম্রাজ্যের সুলতানের অধীনে একজন উচ্চ সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি তার বেশিরভাগ কাজ মার্ভে করেছিলেন, মার্ভ তার গ্রন্থাগারের জন্য পরিচিত ছিল। তাঁর সর্বাধিক বিখ্যাত রচনাগুলি হল ‘জ্ঞানের দাঁড়িপাল্লার গ্রন্থ’, ‘জ্যোতির্বিজ্ঞানসংক্রান্ত জ্ঞান শাস্ত্র’, এবং ‘সানজারের জ্যোতির্বিজ্ঞানসংক্রান্ত সারণী’।
‘জ্ঞানের দাঁড়িপাল্লার গ্রন্থ’ হল মধ্যযুগীয় বলবিজ্ঞান এবং উদস্থিতিবিজ্ঞান (প্রবাহী বলবিজ্ঞানের শাখা) এর একটি বিশ্বকোষ। যা পঞ্চাশটি অধ্যায়ে বিভক্ত আটটি বই এর সমাহার। এটি উদস্থিতিবিজ্ঞানের ভারসাম্য এবং স্থিতিবিদ্যা ও উদস্থিতিবিজ্ঞানের পিছনের ধারণার একটি অধ্যয়ন। এটিতে অন্যান্য অসম্পর্কিত বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। ‘জ্ঞানের দাঁড়িপাল্লার গ্রন্থ’ এর চারটি পৃথক পান্ডুলিপি এখনো পর্যন্ত টিকে আছে। আল- কাজিনীর আগের প্রজন্মের আল- আসফিজারির দাঁড়িপাল্লা উন্নত করে সানজারের কোষাগারের জন্য দাঁড়িপাল্লা তৈরি করেন আল কাজিনী। ভয়ে সানজারের খাজাঞ্চি আল আসফিজারির দাঁড়িপাল্লা নষ্ট করে দিয়েছিল। তিনি এই খবর শুনে দুঃখ পান। আল-কাজিনী আল- আসফিজারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে তাঁর দাঁড়িপাল্লাকে ‘সংযুক্ত দাঁড়িপাল্লা’ বলেছেন। দাঁড়িপাল্লার অর্থ ছিল ‘সত্য বিচারের দাঁড়িপাল্লা’। খাজাঞ্চিখানা এই দাঁড়িপাল্লা দিয়ে কোন ধাতুগুলি মূল্যবান এবং কোনটি রতœগুলি আসল বা নকল ছিল তা নির্ধারণ করতো। ‘জ্ঞানের দাঁড়িপাল্লার গ্রন্থ’ -তে আল-কাজিনী কোরান থেকে বিভিন্ন উদাহরণসহ বর্ণনা করেছেন যে, তার দাঁড়িপাল্লা ধর্মের সাথে খাপ খায়। আল-কাজিনী যখন তার দাঁড়িপাল্লার সুবিধাগুলি ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন যে, এটি ‘দক্ষ কারিগরদের কাজ সম্পাদন করে’। এটার সুবিধা তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিকভাবে নির্ভুল।
‘জ্যোতির্বিজ্ঞানসংক্রান্ত জ্ঞান শাস্ত্র’ অপেক্ষাকৃত একটি সংক্ষিপ্ত রচনা। এটিতে সাতটি অংশ রয়েছে এবং প্রতিটি অংশে আলাদা আলাদা বৈজ্ঞানিক উপকরণ বরাদ্দ করা হয়েছে। সাতটি যন্ত্রের মধ্যে রয়েছে: একটি ট্রাইকুয়েট্রাম, ডায়োপ্ট্রা, একটি ‘ত্রিভুজাকার যন্ত্র’, একটি চতুর্ভুজ, প্রতিচ্ছবি যুক্ত যন্ত্র, একটি জ্যোতির্বিজ্ঞানাগার এবং খালি চোখে জিনিস দেখার সহজ কৌশল। গ্রন্থটিতে প্রতিটি উপকরণ এবং এর ব্যবহার বর্ণনা করা হয়েছে। কথিত আছে যে মার্ভের শাসক সুলতান সানজার এর জন্য ‘সানজারের জ্যোতির্বিজ্ঞানসংক্রান্ত সারণী’ রচনা করা হয়েছিল এবং তাঁর দাঁড়িপাল্লা সানজারের খাজাঞ্চিখানার জন্য তৈরি হয়েছিল। ‘সানজারের জ্যোতির্বিজ্ঞানসংক্রান্ত সারণী’ এর সারণীতে ছুটির দিন, উপবাস ইত্যাদি যুক্ত ছিল। সারণীতে তেতাল্লিশটি ভিন্ন ভিন্ন তারার আপাত মান এবং (জ্যোতিষশাস্ত্র) প্রকৃতির পাশাপাশি অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশ বর্ণনা করা হয়েছিল। কথিত আছে যে, এই কাজের জন্য আল-কাজিনী মার্ভের বিভিন্ন উচ্চমানের যন্ত্রপাতিযুক্ত মানমন্দিরে পর্যবেক্ষণ করেন।
আল কাজিনী জন্মেছিলেন ১০৭৭ খ্রীষ্টাব্দে ইরানে। তিনি ১১৫৫ খ্রীষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
হিরো নয় কারিনার ছেলের চরিত্রে অভিনয় করতে পারি
রাওয়ার নেতৃত্বে আবদুল হক ও ইরশাদ সাঈদ
স্লোভাক প্রধানমন্ত্রীর মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক
কুমিল্লায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৩ কিশোর নিহত
গাজীপুরে কারখানা থেকে দগ্ধ আরও এক লাশ উদ্ধার
সিরিয়ার আকাশে নিষিদ্ধ হলো ইরানের বিমান
বিমানে ‘ঘুমিয়ে’ ছিলেন বাইডেন : সেনাদের লাশ পেতে অপেক্ষায় স্বজনরা
ভারতে পণ আইন নিয়ে বিতর্ক, এক ব্যক্তির আত্মহত্যা ঘিরে আলোড়ন
ভারত সীমান্তের শূন্যরেখায় পড়ে ছিল বাংলাদেশির গুলিবিদ্ধ লাশ
এক্সপ্রেসওয়েতে কভার্ডভ্যান ও প্রাইভেটকার সংঘর্ষে নারী নিহত, আহত ৫
ব্রাজিলে বাড়ির ওপর বিমান বিধ্বস্ত, সব যাত্রী নিহত
চুয়াডাঙ্গার রামদিয়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে একজনকে হত্যা, আহত ৫
চীনের নতুন বাঁধ প্রকল্পে তিব্বতিদের প্রতিবাদ, দমন-পীড়ন ও গ্রেফতার
গাজীপুরে চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় যুবকের মৃত্যু
সউদীতে এক সপ্তাহে ২০ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার
শহীদ মিনারে ছাত্র আন্দোলনে নিহত আরাফাতের জানাজা বিকালে
নিউইয়র্ক সাবওয়েতে নারীকে পুড়িয়ে হত্যা
ঘনকুয়াশার কারণে ৭ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৫০
আওয়ামী পন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপি নেতার মতবিনিময়